এস আল-আমিন খাঁন পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধি।
পটুয়াখালী সদর উপজেলার লোহালিয়া ইউনিয়নের নাজিরপুর আল-আমিন দাখিল মাদ্রাসায় অনিয়ম দুর্নীতি, সাক্ষর জাল, ভুয়া নিবন্ধনে শিক্ষক নিয়োগ, রাজাকারের বংশধর মাদ্রাসা পরিচালনা করা, সরকারি বরাদ্দ লোপাট, শিক্ষক লাঞ্চিত, সুপার শয্যাশায়ী থেকে ৭ বছরের বেতন ভাতা উত্তোলন, হিন্দুদের জমি দখল করে মাদ্রাসা নির্মান এবং মাদ্রাসার কবলাকৃত জমিতে সুপারের বসতঘর সহ নানান অভিযোগ উঠেছে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের সহকারী শিক্ষক আল-আমিন ও দেলোয়ার হোসেন এবং সাবেক সুপার আব্দুল খালেক বিরুদ্ধে। ১৯৮৩ সালে নির্মিত মাদ্রাসায় অনিয়মের বেড়াজালে উন্নয়নের ছোয়া লাগেনি আজও। মাদ্রাসার কোড নং- ১৭০৭৪, আই,ডি নং-১০২২৫৮৬.
অনুসন্ধানের তথ্য তলের বিড়াল বেড়িয়ে এসেছে জানাগেছে , ১৯৭১ সনের যুদ্ধাপরাধী রাজাকারের তালিকায় রয়েছেন মাদ্রাসা সুপার আব্দুল খালেক আজাদের চাচাতো চাচা এসহাক হাওলাদার ও ভাই আলতাফ হাওলাদার সাবেক ইউপি সদস্য, তিনি জুনিয়র শিক্ষক আবুল বাশারের পিতা।বর্তমানে ওনার নির্দেশনায় ঘুরছে মাদ্রাসার কলকাঠী।
অভিযোগ সুত্রে, তিন শিক্ষক ভুয়া নিবন্ধনে নিয়োগপ্রাপ্ত (১). আবদুন নুর মোঃ আল-আমিন, সহকারী মৌলভী (ইনডেক্স নং-২১০৮১২২), (২). আবুল বাশার জুনিয়র শিক্ষক, (ইনডেক্স নং-২১১১৫৭২), (৩). সাহিদা আক্তার, ইবিঃকারী (ইনডেক্স নং-২১১১৫৭৩). এছাড়া ম্যানেজিং কমিটির সহযোগিতায় হিন্দুদের জমি দখল করে মাদ্রাসা নির্মান এবং মাদ্রাসার জমিতে সুপারের বসতঘর নির্মান।দীর্ঘ ৭ বছর সুপার আব্দুল খালেক আজাদ অসুস্থ অবস্থায় বিছানায় থাকা সত্বেও তার সাক্ষর জাল করে সকল বেতন ভাতা উওোলন করে নিয়ে মাদ্রাসার সকল কার্যক্রমে জাল জালিয়াতির মাধ্যমে অনিয়ম ও দুর্নীতির আখড়া গড়ে তুলেছেন সহকারী শিক্ষক আল-আমিন ও শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন। বিভিন্ন দাপ্তরিকভাবে অভিযোগ হলেও থেমে যায়নি এসব দুর্নীতি আর মাদ্রাসায় নিয়োগ বানিজ্য।
অনুসন্ধানে সরেজমিনে গিয়ে এক ভুক্তভোগীকে বিভিন্ন ভাবে হেরেজমেন্ট করে সকল প্রকার সুবিধা থেকে বঞ্চিত করে রাখার তথ্য মিলেছে। জানাগেছে ভুক্তভোগীর ঐ পোস্ট খালি করে আবদুন নুর আল-আমিনের আপন শেলককে নিয়োগের চেষ্টা চালাচ্ছে।
মাদ্রাসার অনিয়ম দুর্নীতি জালিয়াতির ঘটনা উল্লেখ করে মোসাঃ ঝরনা বেগম নামের এক ভুক্তভোগী লিখিত ভাবে (১). মহাপরিচালক মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর ঢাকা, (২). উপ-পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মাধ্যমিক শিক্ষা ও উচ্চ শিক্ষা বরিশাল অঞ্চল, (৩). জেলা প্রশাসক পটুয়াখালী, (৪). জেলা শিক্ষা অফিসার পটুয়াখালী, (৫). উপজেলা নির্বাহী অফিসার পটুয়াখালী সদর, (৬). উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার পটুয়াখালী, ও (৭). দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন গত ২৩/০৯/২০২০ ইং তারিখ। ভুক্তভোগী ঝড়না বেগম, নাজিরপুর আল-আমিন দাখিল মাদ্রাসার চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী মোঃ শফিউদ্দিন এর স্ত্রী। তিনি বলেন সহকারী শিক্ষক আল-আমিন ও দেলোয়ার ষড়যন্ত্র করে এমপিও থেকে নাম কর্তন করার চেষ্টা ও নিয়োগ বানিজ্যের লালসার শিকার হয়ে বেতন ভাতা থেকে বঞ্চিত অথচ প্রতি মাসে বেতন আসে কিন্তুু কমিটি দেয় না। এনিয়ে ০৯/০৩/২০ ইং তারিখ বিজ্ঞ জেলা জজ আদালতে মামলা দায়ের করেন শফিউদ্দিন, মামলা নং-১০৭/২০২০, যাহা আদালতে আমলে নিয়ে তাকে সকল প্রকার বেতন ভাতা দিয়ে দেয়ার আদেশ প্রদান করেন। বিজ্ঞ জেলা জজ আদালতের রায়, হওয়ার পরে শিক্ষক আল-আমিন বিজ্ঞ হাই কোর্টে আবেদন করেন সেখানে ও শফিউদ্দিন এর পক্ষে রায় দেয়া হয়েছে। এরপরও আদালতের নির্দেশ অমান্য করে ফের সুপ্রিম কোর্টে মামলা দিয়েছে শিক্ষক আল-আমিন। এসব কিছু ব্যাক্তি সার্থ তার আপন শেলককে ঐ পদে নিয়োগ দেয়ার জন্য করছে। আজ কয়েক বছর বেতন ভাতা না পাওয়ায় পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী মোঃ শফিউদ্দিন ও তার পরিবারের।
এবিষয়ে মাদ্রাসার সভাপতি লোহালিয়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ইউসুফ আলী খাঁন বলেন, উল্লেখ ঘটনা আমার জানা আছে। মাদ্রাসায় সভাপতি হওয়ার পরে যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি তাতে সরকারের বরাদ্দ লুট ছাড়া আর কিছুই না এগুলো বন্ধ হলে সরকার লাভবান হতেন। শফিউদ্দিন রায় পেয়ে বেতন ভাতা পাক এটা আমিও চাই। তবে শিক্ষক আল-আমিন বিজ্ঞ সুপ্রিম কোর্ট করায় আমরা ম্যানেজিং কমিটি কিছু করতে পারছিনা যতক্ষন বিজ্ঞ সুপ্রিম কোর্ট রায় না দেন।
অভিযুক্ত শিক্ষক আল-আমিন ও দেলোয়ার বলেন বক্তব্য নিতে ৫ দিন ঘটনাস্থল মাদ্রাসা চলাকালীন উপস্থিত পাওয়া যায়নি,মুঠোফোনে তালবাহানা ও প্রচুর ক্ষমতাশীন লোক রয়েছে তাদের সঙ্গে আলাপ করে সংবাদকর্মীদের সঙ্গে দেখা করবেন বলে জানান।
এবিষয়ে বর্তমান মাদ্রাসা সুপার মাওলানা ইলিয়াছুর রহমান বলেন, আমি কয়েকমাস হলো সুপার হয়েছি তবে সকল প্রকার কাগজপত্র সহকারী শিক্ষক আল-আমিন দেখেন এবং আলতাফ হোসেন মেম্বার সব দেখাশোনা করেন। সাবেক সুপার মাজে মাজে কোলে করে মাদ্রাসায় আনতেন এগুলো সবাই জানে দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিলো। এখানে শিক্ষক ও অফিস সহায়ক সহ মোট ১৮ জন কর্মকর্তা কর্মচারী এবং ১৫০ জন ছাত্রী রয়েছে মাদ্রাসায় এর বেশি কিছু জানিনা বলে জানান।
এবিষয়ে পটুয়াখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার জান্নাত আরা নাহিদ বলেন, এ বিষয়ে ভুক্তভোগীর লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হলে বিষয়টি প্রশাসন ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
জেলা শিক্ষা অফিসার পটুয়াখালী বলেন, মাদ্রাসার কোন অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযোগ হলে অবশ্যই বিষয়টি আমলে নিয়ে দেখা হবে এবং ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আপনারা আরও তথ্য উপস্থাপন করুন।