ইঞ্জিনিয়ার হাফিজুর রহমান খান, কক্সবাজার জেলা প্রতিনিধিঃ দেশের প্রধান অবকাশযাপন কেন্দ্র কক্সবাজারে পর্যটকের ঢল নেমেছে। বিজয় দিবসসহ সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে টানা তিন চারদিন ছুটিতে দলে দলে ভ্রমণকারী আসছে বিশ্বের বৃহত্তম এই সৈকত তীরে। গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে বিজয় দিবসের ছুটি হলেও আগের দিন বুধবার থেকেই কক্সবাজারে পর্যটক আসতে শুরু করে। সাগরপারের প্রায় ৫০০ হোটেল-মোটেল ও কটেজে কোনো কক্ষই খালি নেই। ফলে রাত্রিযাপনে পর্যটকদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।
ব্যবসায়ীদের দাবি, কক্সবাজারে গতকাল এক দিনেই তিন লক্ষাধিক পর্যটকের সমাগম ঘটেছে। কি হোটেল, কি রেস্টুরেন্ট আর কি সৈকতের বালুচর—সবখানেই লোকে লোকারণ্য। পুরো শহরই গিজগিজ করছে পর্যটকে। যারা হোটেলের কক্ষ বুকিং না দিয়ে সৈকত তীরে এসেছে, তাদেরই সবচেয়ে বেশি কষ্টের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। তাদের রাত কাটাতে হচ্ছে সড়কে, যানবাহনে নতুবা সৈকতের পর্যটন ছাতায়। এই সুযোগে স্থানীয়দের অনেকেই নিজেদের বাসা পর্যটকদের কাছে ভাড়া দিচ্ছেন।
আবার হোটেল-মোটেল ও কটেজের অসাধু লোকজন অতিরিক্ত ভিড়ের সুযোগে কক্ষভাড়া কয়েক গুণ বাড়িয়ে নিচ্ছেন। এক হাজার টাকার একটি হোটেল কক্ষের ভাড়া আদায় করা হচ্ছে ১০ হাজার টাকা। চট্টগ্রাম মহাসড়কের কক্সবাজার অংশে কয়েক কিলোমিটার দীর্ঘ লাইন পড়েছে পর্যটকবাহী যানবাহনে।
রাজধানী ঢাকার মুগদার বাসিন্দা অপূর্ব কক্সবাজারে বেড়াতে এসেছেন পরিবারের ২১ সদস্য নিয়ে। তিনি জানান, দেড় থেকে দুই হাজার টাকার প্রতিটি কক্ষের জন্য তাঁদের কাছ থেকে দৈনিক ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ১০ হাজার টাকা করে।
রাজশাহী থেকে আসা তায়েপ-সুহানা দম্পতি বললেন, সত্যিই শীতের এমন দিনে সাজানো-গোছানো পরিষ্কার সৈকত আর সাগরের নীল পানি অসাধারণ লাগছে।
সৈকতের বাইককর্মী জয়নাল আবেদীন জানান, এখানে বেড়াতে আসা পর্যটকরা বিচে বাইকে চড়ে মজা পায়। সৈকতের লাবণী পয়েন্ট থেকে কলাতলী পয়েন্ট পর্যন্ত চার-পাঁচ কিলোমিটার এলাকায় ৩০টি বিচ বাইক রয়েছে। ৫০০ থেকে এক হাজার টাকায় সাগরের ঢেউ ছোঁয়া পানিতে চড়ে আসা যায়। নিরাপত্তার জন্য রয়েছে প্রচুরসংখ্যক টিউব। পর্যটকরা টিউব নিয়ে এ সময়ে সাঁতার কাটে। ঘোড়ায় চড়া যায় ৫০ থেকে ১০০ টাকায়।
নিরাপত্তার জন্য রয়েছে উদ্ধারকারী কর্মীর ২৮ জনের দল। ব্রিটিশ এনজিও আরএনএলআই লাইফ বোটসের সহযোগিতায় সি সেইফ নামের প্রতিষ্ঠানটির ২৮ উদ্ধারকর্মী সৈকতের তিনটি পয়েন্টে সদা প্রস্তুত থাকেন। পাঁচটি ওয়াচ টাওয়ারে বসে পর্যবেক্ষণ করা হয় সার্বক্ষনিক। কোনো পর্যটক সৈকতে গোসল করতে গিয়ে ঝুঁকির মুখে পড়ছে কি না, তা পর্যবেক্ষণের জন্য স্থাপন করা হয়েছে এসব টাওয়ার।
উদ্ধারকর্মী সাহেদ ও নজরুল জানান, সৈকতের লাবণী পয়েন্টের লাল-হলুদ পাতাকা টানানো এলাকাটিই শুধু গোসলের জন্য নিরাপদ স্থান। নিরাপত্তাজনিত কারণে এটি ছাড়া যেখানে-সেখানে ভ্রমণকারীদের গোসল না করা ভালো। বিশেষ করে সুগন্ধা পয়েন্টের চোরাখাল এড়িয়ে চলার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন উদ্ধারকর্মীরা। সৈকতে একটি জরুরি চিকিৎসাকেন্দ্র স্থাপনের ওপর গুরুত্বারোপ করে উদ্ধারকর্মীরা আরো জাানান, স্নান করতে দৈবক্রমে ভেসে যাওয়া এবং নোনা পানি খেয়ে ফেলা ব্যক্তিদের জরুরি চিকিৎসার জন্য এমন ব্যবস্থা জরুরি।
সৈকতে পর্যটকদের নিরাপত্তাবিধানে আরো রয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশ এবং সৈকত ব্যবস্থাপনা কমিটির নিজস্ব কর্মীর দলও। জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে সৈকত ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে সার্বক্ষণিক একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রয়েছেন। জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ সৈকত ভ্রমণকারীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অনুরোধ জানিয়েছেন। অন্যদিকে ট্যুরিস্ট পুলিশের পুলিশ সুপার মো. জিল্লুর রহমান জানিয়েছেন, কক্সবাজার যেহেতু দেশের প্রধান পর্যটনকেন্দ্র, তাই এখানে ট্যুরিস্ট পুলিশ পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছে।