কৃষ্ণ সাগরের তীরবর্তী ওডেসা বন্দরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জেরে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে স্বাক্ষরিত শস্যচুক্তি বড় ধাক্কা খেল বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। অথচ শুক্রবার (২২ জুলাই) চুক্তি হওয়ার পর বৈশ্বিক খাদ্যসংকটে ইতিবাচক পরিবর্তনের আভাস দেওয়া হয়েছিল। শুক্রবার (২২ জুলাই) জাতিসংঘ এবং তুরস্কের মধ্যস্ততায় ইউক্রেন ও রাশিয়া কৃষ্ণ সাগর দিয়ে শস্য রপ্তানির প্রতিবন্ধকতা দূর করতে চুক্তি স্বাক্ষর করে। কিন্তু এর একদিন পর শনিবার (২৩ জুলাই) ওডেসা বন্দরে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলার খবর আসে। কিয়েভের দাবি, মস্কো এই হামলা করেছে। পরে মস্কোও ওই হামলার কথা স্বীকার করে। হামলার পর তুর্কি প্রতিরক্ষামন্ত্রী হুলুসি আকর দাবি করেন, রাশিয়া ইস্তাম্বুলকে জানিয়েছে যে, মস্কো ওডেসার হামলার সঙ্গে যুক্ত নয়। কিন্তু রবিবার (২৪ জুলাই) রুশ কর্তৃপক্ষ জানায়, তাদের ক্ষেপণাস্ত্র ইউক্রেনীয় যুদ্ধজাহাজ ও সমরাস্ত্র ধ্বংস করে দিয়েছে। এ হামলায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে ইউক্রেনে নেওয়া সমরাস্ত্রের মজুদ ধ্বংস করা হয়েছে দাবি রাশিয়ার। এ বিষয়ে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় রবিবার বলেন, ‘লক্ষ্যে আঘাত হানার ক্ষেত্রে উচ্চমাত্রার নির্ভূল,দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ইউক্রেনীয় যুদ্ধজাহাজ এবং যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক কিয়েভকে দেওয়া জাহাজবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রের মজুদ ধ্বংস করেছে।’
এদিকে ওডেসায় হামলাকে ‘রুশ বর্বরতা’ আখ্যা দিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তিনি বলেন, ওডেসা বন্দরে হামলার মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে যে, মস্কো প্রতিশ্র“তি রক্ষায় বিশ্বাসযোগ্য নয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বৈদেশিক নীতি বিষয়ক প্রধান জোসেফ বরেল এই হামলার জন্য সরাসরি রাশিয়াকে দায়ী করেছেন। ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রাস ওডেসার হামলাকে ‘ভয়ঙ্কর’ ও ‘অযৌক্তিক’ আখ্যা দিয়েছেন। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেন, শস্যচুক্তির প্রতিশ্র“তি পূরণে রাশিয়ার ভূমিকা নিয়ে তিনি সন্দিহান।চুক্তির মধ্যস্ততাকারী জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্টনিও গুতেরেসও হামলার ‘কড়া নিন্দা’ করেছেন। শস্য রপ্তানিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকায় থাকা ইউক্রেনের তিনটি বন্দরের মধ্যে ওডেসা একটি যা চুক্তিতে উল্লেখ করা রয়েছে। বর্তমানে ওডেসাসহ অন্য বন্দরগুলোতে রপ্তানির জন্য অনেক শস্য আটকা পড়েছে।কারণ কৃষ্ণ সাগরে রুশ যুদ্ধজাহাজের অবস্থান এবং সমুদ্রে কিয়েভের পেতে রাখা মাইনের কারণে এসব শস্য বের হতে পারছে না।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে যুদ্ধ শুরুর পর কৃষ্ণ সাগর দিয়ে শস্য রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়। এতে এশিয়া, আফ্রিকাসহ সারা পৃথিবীতে সবরাহ সংকট তৈরি হয়। বিশ্বব্যাপী খাদ্যপণ্যের দাম বাড়তে থাকে। ইউক্রেন ও রাশিয়া গোটা পৃথিবীতে বড় খাদ্যপণ্য সরবরাহকারী। বিশেষ করে ইউক্রেনের গমের ওপর এশিয়া-আফ্রিকার অনেক দরিদ্র দেশ নির্ভরশীল। সেকারণে চুক্তিটি স্বাক্ষরের পর সংকট সমাধানের আশা করা হচ্ছিল। চুক্তির প্রভাবে বিশ্ববাজারে গমের দাম এরই মধ্যে কমতেও শুরু করেছে। কিন্তু ওডেসার হামলার কারণে চুক্তি কার্যকর হওয়া নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ওলেহ উসটেঙ্কো জানান, আগামী নয় মাসে ছয় কোটি টন শস্য খাদ্যপণ্য রপ্তানির সক্ষমতা রয়েছে ইউক্রেনের। কিন্তু বন্দর ঠিকমতো সচল না হলে রপ্তানিতে ২৪ মাসও লাগতে পারে। এ অবস্থায় তিনি দাবি করেন, ওডেসার হামলা ইঙ্গিত দিলো যে, পরিস্থিতি এত সহজে বদলাচ্ছে না। সূত্র: এএফপি, রয়টার্স