বিশ্ব শিক্ষক দিবসে বাকশিস’র আলোচনা সভা, র্যালী ও শিক্ষক সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত
করোনা সংকটে বিপর্যস্ত শিক্ষা পুনরুদ্ধারে শিক্ষকদের ভূমিকা অপরিসীম
বিশ্ব শিক্ষক দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতি-বাকশিস চট্টগ্রাম জেলা শাখার উদ্যোগে আজ বিকেলে মহিলা কলেজ, চট্টগ্রাম মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভার প্রধান অতিথি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক অধ্যাপক হোসাইন আহমেদ আরিফ ইলাহি বলেছেন, বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাব এর কারনে গত দেড় বছর দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষা ক্ষেত্রে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সরকার করোনা নিয়ন্ত্রণে এবং শিক্ষাকে সচল রাখার জন্য টিভি ও অনলাইনে শিক্ষাদান অব্যাহত রেখে এবং এসাইনমেন্ট কার্যক্রম চালু করে শিক্ষার্থীদের ধরে রাখার চেষ্টা করেছে। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী বিপর্যস্ত শিক্ষা পুনরুদ্ধারে শিক্ষকরাই হচ্ছেন এখন মূল প্রাণশক্তি। বাংলাদেশেও শিক্ষা পুনরুদ্ধারে শিক্ষকদের ভুমিকা অপরিসীম। সরকারের ইতিবাচক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে শিক্ষকদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টায় শিক্ষা আবার সচল হয়ে শিক্ষার্থীরা প্রতিষ্ঠানে প্রাণ ফিরে পাবে এটাই প্রত্যাশা। তিনি বলেন, শিক্ষার উন্নয়ন ব্যতীত জাতীয় উন্নয়ন অসম্ভব তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ২০১০ সালে ঘোষিত জাতীয় শিক্ষানীতির মাধ্যমে ২০৪১ সালে উন্নত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি গুনগত শিক্ষা নিশ্চিত করতে এসডিজি-৪ অর্জন এবং প্রধানমন্ত্রীর রূপকল্প বাস্তবায়নে শিক্ষকদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করার উপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি এমপিওভুক্ত কলেজ শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের পদোন্নতি সমস্যার সমাধানকল্পে সরকারের সা¤প্রতিক ২০২১ নীতিমালার আলোকে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য শিক্ষকদের প্রতি আহবান জানান। জাতিসংঘের বিশেষায়িত সংস্থা ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব শিক্ষক দিবস এর মূল প্রতিপাদ্য ” শিক্ষা পুনরুদ্ধারে শিক্ষকরাই মূল প্রাণশক্তি” বিষয়ে বক্তারা বলেছেন, শিক্ষকরা যুগে যুগে যে কোন সংকটে নেতৃত্ব দিয়েছে, কারণ জাতিকে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষার কোন বিকল্প নেই। তাই বৈশ্বিক এই করোনা সংকটে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকা অবস্থায় শিক্ষকরা বিপর্যস্ত শিক্ষা ব্যবস্থা সচল রাখা এবং শিক্ষার ডিজিটাল রুপান্তরে ব্যাপক প্রয়াস চালিয়েছে। বক্তারা বলেন, শিক্ষা যদি এগিয়ে না যায় তাহলে জাতির সামগ্রিক উন্নয়ন ও অগ্রগতি ব্যাহত হবে। কিন্তু শিক্ষার এই রূপান্তরে ৯৫ ভাগ দায়িত্ব পালনরত বেসরকারি শিক্ষকরা অবহেলিত ও বঞ্চিত। তারা বৈষম্যের শিকার। বক্তারা মান সম্পন্ন শিক্ষা এবং শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তরে শিক্ষা ক্ষেত্রে বিদ্যমান বৈষম্য দূরীকরণে মুজিব জন্মশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণের ঘোষণা দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার প্রতি আহŸান জানিয়েছেন। তারা বলেন মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা, নীতি ও আদর্শ ছিল বৈষম্যহীন সমাজ ও অভিন্ন,গণমূখী ও সর্বজনীন শিক্ষা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার আধুনিক উন্নত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন বাস্তবায়নে শিক্ষকরা সবসময় তাঁর সাথে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেন, শিক্ষা জাতীয়করণের লক্ষ্যে অন্তবর্তীকালীন সরকারি ও বেসরকারি বৈষম্য দূরীকরণে সরকারি শিক্ষকদের অনুরূপ বাড়িভাড়া, পুর্নাঙ্গ উৎসব ভাতা, পুর্নাঙ্গ চিকিৎসা ভাতা, পুর্নাঙ্গ পেনশন প্রদান, এমপিওভুক্ত কলেজে সহযোগী অধ্যাপক পদ নীতিমালায় পুনর্বহাল করে পদোন্নতি, অধ্যাপক পদ সৃষ্টি, শিক্ষকদের বদলীর নীতিমালা প্রণয়ন, নন এমপিও অনার্স ও মাস্টার্সে পাঠদানরত শিক্ষকদের এমপিও প্রদান, শিক্ষা দপ্তরে ৩৫% বেসরকারি শিক্ষকদের প্রেষণে নিয়োগ দান সহ ২০২১ সালের জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালায় শিক্ষক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্বার্থবিরোধী ধারা সংশোধন করে সৃষ্ট সংকট নিরসনের আহবান জানিয়েছেন। বাকশিস, চট্টগ্রাম জেলা শাখার সভাপতি অধ্যক্ষ দবির উদ্দিন খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় মুখ্য আলোচক ছিলেন বাকশিস কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ও চট্টগ্রাম জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আবু তাহের চৌধুরী, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ সমীর কান্তি দাশ এর সঞ্চালনায় সভার প্রারম্ভে নবনিযুক্ত অধ্যক্ষ আ ন ম সরোয়ার আলম, অধ্যক্ষ শ্যামল কান্তি মজুমদার, অধ্যক্ষ আবুল কাশেম, অধ্যক্ষ মাঈনুদ্দিন আহমদ, উপাধ্যক্ষ সমীর রঞ্জন নাথ, উপাধ্যক্ষ বিজন শীল, উপাধ্যক্ষ ফরিদা সুলতানাকে সংবর্ধিত করা হয় এবং সংবর্ধিত অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষগন তাদের অনুভূতি প্রকাশ করেন। সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক কবি অধ্যাপক ফাউজুল কবির, প্রাক্তন সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আলী চৌধুরী, প্রাক্তন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক কাজী শামসুর রহমান, কেন্দ্রীয় ও জেলা নেতৃবৃন্দ অধ্যাপক সুকুমার দত্ত, অধ্যাপক শিব প্রসাদ, অধ্যাপক সুজিত কুমার দাশ, অধ্যক্ষ মিসবাহ উর রহমান, অধ্যাপক ইউনুস মিয়া, অধ্যাপক কমরুদ্দিন আহমদ, উপাধ্যক্ষ সৈয়দ উদ্দিন আহমদ, অধ্যক্ষ জসীম উদ্দিন, অধ্যক্ষ আবুল মনসুর, অধ্যাপক মো: ইব্রাহিম, অধ্যাপক কামরুল আনোয়ার চৌধুরী, অধ্যক্ষ জামাল উদ্দিন,অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী, অধ্যাপক কামাল উদ্দিন, অধ্যক্ষ তৌহিদুল আলম, অধ্যাপক হোসাইন শহীদ অহিদুল আলম, অধ্যাপক নীলুমনি শর্মা, অধ্যাপক আবদুল কাইয়ুম, অধ্যাপক ড. মোজাহেরুল আলম, অধ্যাপক আয়েশা পারভীন চৌধুরী, অধ্যাপক তুষার কান্তি ভারতি ও কর্মচারী ফেডারেশন নেতা আক্কাস মিয়া প্রমুখ। আলোচনা সভা ও সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের পুর্বে শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণের দাবিতে বাকশিস এর বিরাট র্যালী বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে কলেজ সন্মুখে এসে শেষ হয়।