সঞ্চয়ের নামে মানুষের শত কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা হয়ে যাচ্ছে সমবায় সমিতি নামে একটি অসাধু চক্র। যেখানে যত বেশি মানুষের সমাগম সেখানেই গড়ে তোলা হয় সমবায় সমিতি। টার্গেট করা হয় গার্মেন্টস কারখানায় কর্মরত বিভিন্ন শ্রমিক শ্রেণীর পেশার গরীব মানুষদের। সেই রকমই একটি শ্রমিক অধ্যুষিত এলাকা হলো চট্টগ্রাম সিইপিজেড। এখানে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত লাখ লাখ মানুষের বসবাস এবং কর্মস্থল। আর এই সুযোগ টাই কাজে লাগিয়ে কিছু প্রতারক তাদের প্রতারণার ফাঁদে ফেলে হাতিয়ে নিয়ে যাচ্ছে মানুষের কোটি কোটি টাকা। এই ইপিজেড কিংবা ইপিজেডে কর্মরত শ্রমিকদের টার্গেট করে চট্টগ্রাম ফ্রি পোর্ট এলাকায় গড়ে তোলা হয় সমবায় সমিতি নামক একটি প্রতারণার বড় ফাঁদ। যার ফাঁদে পড়ে সর্বস্ব হারিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। শুধু চট্টগ্রামেই নয় দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলায় এই ধরণের প্রতারণার স্বীকার হচ্ছেন দেশের হাজার মানুষ। এই প্রতারণার ফাঁদে পড়ে অনেক সংসার ভেঙ্গে পর্যন্ত যাচ্ছে। দেখা যায় একজন নারী গার্মেন্টসে চাকরি করে মাসে ১২-১৫ হাজার টাকা আয় করে, তার মধ্যে প্রতি মাসে অধিক মুনাফার লোভে ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা করে সঞ্চয় করে রাখতো এই সমবায় সমিতির কাছে। বেশি মুনাফা বা ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেই সমবায় সমিতিতে টাকা জমা শুরু করে। কিন্তু সমবায় সমিতি গুলো বছর কয়েক ঠিকঠাক মতো সমিতির কার্যক্রম পরিচালনা করলেও যখনই তাদের ভান্ডারে কোটি টাকা জমা হয় ঠিক তখনই তাদের কার্যক্রম গুটিয়ে উধাও হয় হয়ে যায়। যার জ্বলন্ত উদারহণ হলো চট্টগ্রাম ইপিজেডে রূপসা মাল্টিপারপাস, প্রাইম স্টার, নিউসান সহ প্রায় ৯৫ টি সমবায় সমিতি। যারা বর্তমানে কোটি কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা হয়ে আছে। আর টাকা পাওয়ার আশায় পথে পথে ঘুরে বেড়াচ্ছে ভুক্তভোগীরা। সারা দেশে সমবায় সমিতির এত অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ থাকা স্বত্ত্বেও নিশ্চুপ হয়ে আছে সমবায় অধিদপ্তর! এই সমবায় সমিতির দুর্নীতির দায় কোন ভাবেই এড়াতে পারে না সমবায় অধিদপ্তর। একটি মাল্টিপারপাস বা সমবায় সমিতি যখনই অধিদপ্তর থেকে নিবন্ধন নিয়ে কাজ পরিচালনা করা শুরু করে তখনই তারা এর সার্বিক তদারকির দায় হয়ে পড়ে। কিন্তু তাদের তদারকির অবহেলার কারণে আজ দেশের লাখ লাখ নিন্ম মধ্যবিত্ত মানুষ পথে বসে গেছে। যা দেশের জন্য একটি হুমকি সরূপ। এই ভাবে যদি প্রতিনিয়ত সমবায় নামে মানুষ কে পথের ফকির বানানোর ব্যবসা চলতে থাকে তাহলে দেশের মানুষের একটি অংশ জন বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। তাই সকল ক্ষেত্রে সচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে সরকারের পক্ষ থেকে উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে হবে। বর্তমানে নতুন করে যেকোনো সমবায় সমিতির নিবন্ধন দেওয়ার ক্ষেত্রে সঠিক ভাবে যাচাইবাছাই কর নিবন্ধন দেওয়ার বিষয়ে জোর দেওয়া প্রয়োজন। তার পাশাপাশি যে সমস্ত সমবায় সমিতি গুলো অর্থ ক্যালেঙ্কারী বা অর্থ আর্থসাৎ করে বিদেশে পাড়ি দিয়েছেন তাদেরকে ফিরে এনে আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করে গ্রাহকের অর্থ ফিরিয়ে দিতে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে।
লেখক
শিশুবন্ধু মুহাম্মদ আলী
মহাসচিব, এশিয়ান নারী ও শিশু অধিকার ফাউন্ডেশন।