উপসম্পাদকীয়ঃ
অতিতে সংসার গুলোতে টানাপোড়েন ছিলো, গ্রামীণ সংস্কৃতিতে বিশেষ করে দেখা যেতো “নুন আনতে পানতা ফুরায়” হলেও বিশ্বাস ভরসা ছিলো দু’টো জীবনে। দম্পতির বাঁধনের গাঁথুনি ছিলো অকৃত্রিম। দু’মুঠো খেয়ে পরে জীবন কাটিয়ে দিতো ভরসার সংসারে। “উন্নত মানসিকতা”, “স্বাধীন চেতা চিন্তা ভাবনা”, “কেউ কারো অধীনস্থ হতে না চাওয়া” ‘র নামে আজকাল সৃষ্টি হচ্ছে বিবাহবিচ্ছেদের মতো অভিশাপের! ইসলামি দৃষ্টিতে এটি বৈধ কাজের মধ্যে সবচেয়ে ঘৃণিত কাজ হিসেবে বিবেচিত।
সম্প্রতি একাধিক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে আমাদের দেশে গত তিন বছরে তালাকের পরিমান পাঁচগুণ বেড়েছে। দৈনিক প্রথম আলো বলছে, তুলনামূলক কম তালাক হচ্ছে চট্টগ্রাম এবং সিলেটে। আর তালাকের হার সবচেয়ে বেশি বরিশাল বিভাগে। তাছাড়া যুগান্তরে এসেছে,ঢাকায় দিনে একটি করে আবেদন পড়ছে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে। আর প্রথম আলো বলছে,ঘন্টায় একটি করে আবেদন পড়ছে,তাদের শতকরা ৭০ ভাগ নারীরা আবেদন করছে আর ৩০ ভাগ আবেদনকারী পুরুষ।
এমনই স্পর্শকাতর বিষয় তালাক। যার কিছু কারণ গবেষণা করে পাওয়া যায়, সেগুলো আলেকপাত করার চেষ্টা করছি আপনাদের কাছে। সোশ্যাল মিডিয়া, Understanding বা বোঝাপড়ার অভাব, পারিবারিক দ্বন্দ্ব, পরকীয়া প্রেম বা তৃতীয় ব্যক্তির প্রবেশ, পুরুষের অতিরিক্ত শারীরিক চাহিদা অনুযায়ী স্ত্রী কে কাছে না পাওয়া, স্বাবলম্বী হয়ে যাওয়া,কেউ কারো অধীনস্থ হতে না চাওয়া, বিশ্বাসহীনতা, সংসারে ঔদাসিন্য, মেয়েদের ক্ষেত্রে ব্যক্তি স্বাধীনতা লাভ, উচ্চশিক্ষাও অনেকাংশে প্রভাব বিস্তার করে মেয়েদেরকে ডিভোর্সে আগ্রহী করে তোলে।
বর্তমানে প্রায় সময়ই একটি বিষয় শোনা যাচ্ছে, (মেয়েদের অভিযোগের ভিত্তিতে) “বৈবাহিক ধর্ষণ”-যেখানে স্ত্রী কে সহবাসে বা সেক্স করতে জোর করা বোঝায়। যেটা নিয়ে তোলপাড় চলছে ভারত সহ বেশ কয়েকটি দেশে,পরিবর্তন আনয়ন করা হচ্ছে বৈবাহিক আইনেও। বিশ্বের দিকে তাকালে ডিভোর্স বিষয়টি খুবই সহজভাবে নেওয়া যায়। কিন্তু আমাদের দেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে তা অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এসব বিষয় বর্তমানে বেশি হচ্ছে নব দম্পতি বা ইয়াং কাপল দের মাঝে।একদেড় বছরের মধ্যে বা সন্তান একজন বড় হওয়ার পরপরই শুরু হয় নিজেদের মধ্যে শূণ্যতা-পূর্ণতার টানাপোড়েন। শুরু হয় দ্বন্দ্ব-বিরোধ। বয়স্ক দের মাঝেই বা কেনো এই বিবাহবিচ্ছেদ ঘটছে? এই প্রশ্ন এলে ভারতের এক গবেষক বলছেন (জাগো নিউজ), বয়স্করা পাঁচটি কারণে ডিভোর্সে আগ্রহী হয়ে থাকে। প্রথমত জীবনকে নতুন ভাবে উপভোগ করার ইচ্ছে। দ্বিতীয়ত সন্তানাদি বড় করে দিয়ে নিজেদের দায়-দায়িত্ব শেষ। তৃতীয়ত নিজেকে নতুন করে খুঁজে পাওয়া। চতুর্থত যুবক/যুবতী সঙ্গী পেয়ে যাওয়া। পঞ্চমত শারীরিক কিংবা সেক্স।
এই ডিভোর্স বা তালাক অথবা বিবাহবিচ্ছেদ ক্রমাগত বাড়ছে এবং ঘটনাগুলো ঘটছে, তার সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ে সন্তানদের উপর। সে সময়টাতে একটি সন্তান বড় হয় পরিচয়হীন ভাবে, “ব্রোকেন ফ্যামিলি” র মাঝে পড়ে মানসিকতা নষ্ট হয়ে যায় বাচ্চাদের। নিজেদেরকে ভালোবাসার বন্ধনহীন,একাকী আর সঙ্গীহীন ভাবতে ভাবতে একটা সময় ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে। যেখানে পরিবার হলো আসল বিদ্যালয় সেখানে,দিনের পর দিন মা-বাবার মধ্যে ঝগড়াঝাঁটি, বকাবকি, গালাগাল, মারপিট এবং অনৈতিক আচরণ দেখতে দেখতে তারা মা-বাবার উপর ভরসা হারানোর পাশাপাশি নিজেদের উপরও ভরসা হারিয়ে বসে। ফলে,সন্ত্রাসবাদের পথে হাঁটতে শুরু করে নিষ্পাপ শিশুরা। বখে যায় জাতির ভবিষ্যৎ, আর অকালে ঝরে যায় মেধা গুলো। যার দরুণ তারা চাপ সইতে না পেরে সুইসাইড বা আত্নহত্যাও করে বসে অনেক সময়। বন্ধুমহলে লজ্জিত হতে হয়,সমাজের কাছে ছোট হয়ে জীবন কাটাতে হয়।
এসকল অভিশাপ থেকে বের হয়ে আসতে হবে। জাতির ভবিষ্যতের সার্থে ,নিজেদের মাঝে ধৈর্য ধরে সমঝোতা করে নিতে হবে। শেষ কবে, হাতে হাত রেখে প্রিয়জনের সাথে ঘুরতে গেছেন মনে করুন! শেষ কবে ফুল নিয়ে বাসায় এসেছিলেন? শেষ কবে স্বামী কে বলেছিলেন,তোমার জন্য আজ কি রান্না করবো? শেষ কবে বলেছিলেন স্ত্রী কে, চলো আজ ঘুরে আসি বাইরে থেকে! শেষ কবে দু’জন চোখে চোখে তাকিয়েছে সেটাই মনে নেই অনেকেরই। কেনো হবে এমন? বিবাহ একটি পবিত্র বন্ধন। জনম জনমের বন্ধন। সকলের উচিত উপভোগ্য করে গড়ে তোলা এই জীবনকে। নিজেদের সন্তানেরা কি শিখবে আপনাদের কাছে! ভালোবাসার বন্ধন গুলে পরিবার থেকেই যেনো আসে এভাবে গড়ে তুলুন বৈবাহিক জীবন। সুখী সমৃদ্ধ জীবন হোক সকলের।
লেখক:
জোয়াইরিয়া বিনতে আজিজ
শিক্ষার্থী: ২য় বর্ষ, আরবি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।