সরকারের শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় চলতি মাসেই প্রথম বারের মত করোনাভাইরাসের ৫০ লাখ ভ্যাকসিন দেশে আসছে। পর্যায়ক্রমে আরো ৩ কোটি ভ্যাকসিন আমরা পাবো। রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম সম্পন্নের মাধ্যমে এসব ভ্যাকসিন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রয়োগ করা হবে। এ লক্ষ্যে সরকার যাবতীয় গ্রহন করেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ইপিআই কার্যক্রমে যেভাবে সফলতা এসেছে ঠিক করোনা ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রমেও সফল হবো।
এজন্য সংশ্লিষ্ট সকলের আন্তরিক সহযোগিতা প্রয়োজন। তবে করোনার ভ্যাকসিন নিয়ে কোন ধরণের অপপ্রচার বা গুজব সৃষ্টি করলে তাদের চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। গুজব সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে সজাগ থাকতে হবে।
আজ বুধবার ১৩ জানুয়ারী বিকেল সাড়ে ৩টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত করোনা ভাইরাস ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রম সুষ্ঠভাবে সম্পাদনের লক্ষ্যে গঠিত চট্টগ্রাম জেলা কমিটির প্রথম সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সহযোগিতায় জেলা প্রশাসন সভার আয়োজন করেন।
নবাগত চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ও কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ মমিনুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় করোনার ভ্যাকসিন কার্যক্রম সম্পর্কে মুল বিষয় উপস্থাপন করেন কমিটির সদস্য সচিব জেলা সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি। বক্তব্য রাখেন দি চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মাহাবুবুল আলম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) মোঃ জাহাঙ্গীর, জেলা আনসার কমান্ড্যান্ট বিকাশ চন্দ্র দাস, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মোঃ সাজ্জাদ হোসেন চৌধুরী, ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ আসিফ খান, জেলা শিক্ষা অফিসার জিয়াউল হায়দার হেনরী, সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার হৃষিকেশ শীল।
উপস্থিত ছিলেন পরিবার পরিকল্পনা দপ্তরের উপ-পরিচালক ডা. উ খ্যে উইন, সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিকেল অফিসার ডা. মোঃ নুরুল হায়দার, মেডিকেল অফিসার ডা. মোঃ ওয়াজেদ চৌধুরী অভি, আলমানাহিল ওয়েল ফেয়ার ফাউন্ডেশনের প্রধান সমন্বয়কারী আবুল কালাম আজাদ, জেলা তথ্য অফিসার সাঈদ হাসান, এফপিএবি কর্মকর্তা মোঃ কামরুজ্জামান উজ্বল, জেলা স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক সুজন বড়ুয়া প্রমুখ।
সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান বলেন, সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে চট্টগ্রামে করোনা ভ্যাকসিন কার্যক্রম সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন করা হবে। চাহিদা অনুযায়ী জেলার সর্বত্র ভ্যাকসিন প্রেরণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, আগামী ২১ থেকে ২৫ জানুয়ারীর মধ্যে করোনার ভ্যাকসিন আসবে। ২৬ জানুয়ারী থেকে ভ্যাকসিন প্রয়োগের রেজিস্ট্রেশন শুরু হবে এবং ফেব্রুয়ারীর প্রথম সপ্তাহ থেকে অগ্রধিকার ভিত্তিতে প্রয়োগ করা হবে। পর্যায়ক্রমে সবাই এ ভ্যাকসিনের আওতায় আসবে। সিভিল সার্জন কার্যালয়ের ইপিআই শাখায় কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন রাখার জন্য ওয়াক-ইন-কুলার (ডব্লিউআইসি রয়েছে।
এখানে ১ লাখ ডোজ সংরক্ষণ করার ব্যবস্থা রয়েছে। উপজেলা পর্যায়ে প্রেরিত ভ্যাকসিন আইএলআর ফিজে সংরক্ষণ করা হবে। আইএলআর ফ্রিজে ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার ডোজ ভ্যাকসিন রাখা যাবে। ডব্লিউআইসি ও আইএলআর ফিজের তাপমাত্রা থাকবে ২-৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস। তবে ইপিআই টিকা অন্য ডীপ ফ্রিজে আলাদা করে রাখার ব্যবস্থা থাকবে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে কোল্ড ক্যারিয়ারে করে ইউনিয়ন পর্যায়ে ভ্যাকসিন পাঠানোর ব্যবস্থা থাকবে। সিনিয়র স্টাফ নার্স, মেডিকেল এ্যাসিস্ট্যান্ট ও ফ্যামিলি প্ল্যানিংয়ের কিছু সিনিয়র কর্মচারী ভ্যাকসিন প্রয়োগের দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবে।
তিনি সিভিল সার্জন বলেন, ভ্যাকসিন আসার সাথে সাথে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী কোভিড-১৯ স্বাস্থ্যসেবায় সরাসরি সম্পৃক্ত সকল স্বাস্থ্যকর্মী, সকল অনুমোদিত বেসরকারী ও প্রাইভেট স্বাস্থ্যকর্মী, বীর মুক্তিযোদ্ধা, সম্মুখ সারির আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সামরিক-বেসামরিক প্রতিরক্ষা বাহিনী, রাষ্ট্রপরিচালনায় অপরিহার্য কার্যালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী, সম্মুখ সারির গণমাধ্যমকর্মী, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, ৭৭ বছর থেকে অধিক বয়স্ক জনগোষ্ঠী, জাতীয় দলের খেলোয়ার, বাফার, ইমার্জেন্সী ও আউটব্রেকারদেও মাঝে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এ ভ্যাকসিন (মাংসপেশীতে) প্রয়োগ করা হবে। তবে ১৮ বছরের নীচে বয়সী ও গর্ভবতী কোন মহিলা এ ভ্যাকসিন পাবেনা। যারা ইতোমধ্যে কোভিড আক্রান্ত হয়েছে তারা ১ মাস পর এ ভ্যাকসিন নিতে পারবে ।
তিনি আরও বলেন, তালিকাভূক্ত জনগোষ্ঠীকে ৮ সপ্তাহ ব্যবধানে (১ম ডোজের ৮ সপ্তাহ পর ২য় ডোজ) ভ্যাকসিন প্রদান করা হবে। প্রবাসী অদক্ষ শ্রমিকদেরও এ ভ্যাকসিন প্রদান করা হবে। ভ্যাকসিন পরিবহন, সংরক্ষণ ও প্রদানের সময় যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পুলিশ বাহিনী সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান করবে। ডিজিটাল পদ্ধতিতে অনলাইন নিবন্ধন, ভ্যাকসিন কার্ড, সম্মতিপত্র, ভ্যাকসিন সনদ প্রদানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তরের আইসিটি বিভাগ কর্তৃক “ সুরক্ষা ওয়েবসাইট” প্রস্তুত করা হয়েছে।