মায়ের কোনো জাত, ধর্ম কিংবা দেশ থাকে না। চিরন্তন এই সত্যটিই আরও একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন মালয়েশিয়ার বাসিন্দা চীনের নাগরিক চি হুই লান। ঘটনাটি মানুষের মনে দাগ কেটেছে। ২২ বছর আগে রোহানার মা তাকে কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষিকা চি হুই লানের কোলে তুলে দিয়ে তার নিজ দেশ ইন্দোনেশিয়া চলে যান। রোহানা সে সময় আড়াই বছরের শিশু। রোহানার মা ওই কিন্ডারগার্টেনের একজন ক্লিনার হিসেবে কাজ করতেন। চি হুই লান রোহানাকে তার নিজের সন্তানের মতো করে বড় করে তোলেন। পড়াতে সকালে স্কুলে, বিকালে ধর্মীয় শিক্ষার জন্য ইসলামি একাডেমিতে নিয়ে যেতেন। বাসায় ব্যবস্থা করে দিতেন নামাজ, কুরআন ও হাদিস পড়ার। হালাল খাবারের পাশাপাশি পরিধান করাতেনন মুসলিম পোশাক। চি হুই লান ছিলেন একজন মালয়েশিয়ান চাইনিজ ভিন্নধর্মী মহিলা। ধর্মীয় ও বর্ণগত পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও তার নিজের রক্ত-মাংসের মেয়ের মতো লালন-পালন করেছেন রোহানাকে।
গত ১৬ জানুয়ারি দেশটির জাতীয় দৈনিক স্টার অনলাইনে রোহানা ও তার পালক-মা চি হুই লানকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে রোহানা ও তার পালক মাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঝড় উঠেছে।অন্য ধর্মের প্রতি এতটা শ্রদ্ধাশীল হওয়ার কারণে মালয়েশিয়ার সাধারণ মানুষ হতে জাতীয় পত্রিকায় সর্বোপরি প্রধানমন্ত্রীর মন স্পর্শ করেছে, চি হুই লানের ভালোবাসা। সামাজিক মাধ্যমে অনেকেই বলছেন, এমনই হওয়া উচিত আমাদের। আমরা যেন মানুষের মতো মানুষ হই এবং প্রতিটা ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হই। চি হুই লান বলেন, আমি একজন মা হিসেবে মরার আগে তাকে বিয়ে দিতে চাই এবং তাকে সফল ও সুখী হতে দেখতে চাই। আমি স্বস্তি পেয়েছি, কারণ তার সমস্ত জীবন আমি নিশ্চিত করেছি যে সে একজন মুসলিম হিসেবেই বড় হয়েছে এবং চিরকাল সেভাবেই থাকবে। এর আগে রোহানার নাগরিকত্ব না পাওয়ার বিষয়টি বাটু এলাকার আবাসিক প্রতিনিধি পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম মুজাফফর গোলাম মুস্তাকিমের কাছে উত্থাপন করেছিলেন চি।
রোহানা বলেন, বর্তমানে আমি নাগরিকত্বের মর্যাদা পাওয়ার সমস্যার মুখোমুখি হয়েছি। আমি বুঝতে পারি, কারণ আমার মা ইন্দোনেশিয়ান এবং আমার বাবা ছোটবেলা থেকেই নিখোঁজ। আমি ২০১৬ সালে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেছিলাম এবং এখন পর্যন্ত কোনো সুরাহা হয়নি। সামাজিকযোগাযোগ মাধ্যম ও পত্র-পত্রিকায় রোহানাকে নিয়ে সংবাদ পরিবেশনের পর প্রধানমন্ত্রী দাতুক সেরি ইসমাইল সাবরি ইয়াকোব রোহানাকে সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ১৭ জানুয়ারি (সোমবার) প্রধানমন্ত্রী তার প্রেস সচিব আসরাফ আফনান আহমেদ মুর্তজার সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে শেয়ার করা একটি ভিডিওর মাধ্যমে রোহানাকে সহায়তা করার প্রতিশ্রুতির কথা জানান। এর আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রোহানার মামলা দেখার নির্দেশনাকে স্বাগত জানিয়েছেন। একটি ফেসবুক পোস্টে দাতুক সেরি হামজাহ জয়নুদিন বলেছেন, তিনি রোহানার দুর্দশা দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন এবং তার অফিসকে মামলাটি তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন। নেটিজেনরা হামজাহের ফেসবুকে মন্তব্য বিভাগে বলেছেন, রোহানা মালয়েশিয়ান হওয়ার যোগ্য। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে নেটিজেনরা বলছেন, এই ধরনের সমস্যা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত এবং আমরা আশা করি, রোহানা শিগগিরই দিনের আলো দেখতে পাবে।
পালক মাতার সঙ্গে রোহানা।