দেশে শিক্ষার হার সন্তোষজনক। কিন্তু,শিক্ষার গুনগত মান অসন্তোষজনক। ‘সাপ্তাহিক আলোকিত সন্দ্বীপ’ মেধাবৃত্তি পরীক্ষায় ২০১৮ সালে উত্তীর্ণ কৃতি শিশুদের পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান ১২ এপ্রিল ২০১৯, শুক্রবার সন্দ্বীপ উপজেলার আলোকোজ্জ্বল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হাজী আবদুল বাতেন সওদাগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সীতাকুণ্ড তাহের-মনজুর কলেজের অধ্যক্ষ মুকতাদের আজাদ খান। আয়োজনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মাহফুজুর রহমান মিতা মহোদয় শিক্ষার গুনগত মানোন্নয়নে শিক্ষকদের পাশাপাশি অভিভাবকদের মনযোগী হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি সন্দ্বীপের শিক্ষার গুণগত মান নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। এ ছাড়াও বিভিন্ন সভা-সেমিনারে শিক্ষামন্ত্রী-উপমন্ত্রী মহোদয়ও শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নে জোর দেয়ার জন্য শিক্ষক-অভিভাবক সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে আহ্বান জানান।
শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নে করণীয়-
১.অভিভাবকের দায়িত্বশীলতা-
অভিভাবকের ফেসবুক আসক্তি দূরীকরণ, উচ্চ মাধ্যমিক পাশের পূর্বে সন্তানের হাতে এন্ড্রয়েড সেট দেয়া থেকে বিরত থাকা, সন্তানের একাডেমিক ফলাফল স্কুল-কলেজ গিয়ে দেখে আসা, সময় মত স্কুলে-কলেজ গিয়ে বেতন পরিশোধ করা, অশুদ্ধ ছাত্র রাজনীতি বিষয়ে সন্তানকে নিরুৎসাহিত করা, বয়ঃসন্ধিকালীন সচেতনতা, সাধ-সাধ্যের সমন্বয়ে সন্তানের সুস্থ বিনোদন নিশ্চিত করা-এইসব বিষয়ে অভিভাবকদের দায়িত্বশীল হতে হবে।
শিক্ষকের দায়িত্বশীলতা-
শিক্ষক নিজে পড়াশোনায় থেকে আন্তরিকতার সাথে পাঠদান করবেন, শিক্ষকতাকে মহান পেশা হিসাবে আত্মস্থ করা, অপেক্ষাকৃত দূর্বল ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে আলাদা ব্যাচ করা, ক্লাসে মোবাইল ব্যবহারে বিরত থাকা, সর্বত্র শিক্ষকসূলভ আচরণ করা, শিক্ষকতা পেশায় এসে উচ্চ বিলাসে বিভোর না থাকা, সময়নিষ্ঠ, পরিপাটি, চরিত্রবান হওয়া, প্রয়োজনে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসে অভ্যস্ত হওয়া-এইসব বিষয়ে শিক্ষকদের দায়িত্বশীল হতে হবে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান-কমিটির দায়িত্বশীলতা-
স্বচ্ছ নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ, ক্যারিশমাটিক লিডারশিপ সম্পন্ন অধ্যক্ষ-প্রধান শিক্ষক নিয়োগ, প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে বছরে একবার শিক্ষকদের প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, চলতি দায়িত্ব, ভারপ্রাপ্ত প্রধান দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনার মানসিকতা পরিহার করা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অশুদ্ধ ছাত্র রাজনীতি মুক্ত রাখা, ডিবেটিং ক্লাব, ক্রীড়া ক্লাব, ক্যারিয়ার ক্লাব, লিটারেচার ক্লাব, কালচারাল ক্লাব, শিক্ষা সফর এর পাশাপাশি অন্যান্য সহ-পাঠক্রমিক কার্যক্রম অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চালু রাখা, কলেজ গভর্নিং কমিটির সভাপতি স্নাতকোত্তর, সবধরণের স্কুল কমিটির সভাপতি ডিগ্রী পাশ বাধ্যতামূলক করা, বার্ষিক বাজেট পেশ এইসব বিষয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান- কমিটিকে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে।
ছাত্র-ছাত্রীদের দায়িত্ব-
কলেজ-বিদ্যালয়ে পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীদের প্রধান কাজই হলো নিয়মিত ক্লাসে অংশগ্রহণ করা। প্রতিদিনের পড়া প্রতিদিন শেষ করা। প্রয়োজনে গ্রুপ স্টাডিতে নিয়মিত হওয়া। ছাত্র-ছাত্রীদের সহ-পাঠক্রমিক কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে যুক্ত থাকার পাশাপাশি নীতি-নৈতিকতা ও ধর্মীয় শিক্ষায় মনযোগী হওয়া। উচ্চ মাধ্যমিক পাশের পূর্ব পর্যন্ত মোবাইল-ফেসবুক ব্যবহারে বিরত থাকা, এইসব বিষয়ে ছাত্রদের দায়িত্বশীল হতে হবে।
রাষ্ট্রে শিক্ষার ভিত যত মজবুত হবে রাষ্ট্রের সার্বিক অবস্থা ততই সুদৃঢ় হবে। মহান স্বাধীনতার সূবর্ণ-জয়ন্তীতেও আমরা আমাদের শিক্ষার ভিত দাঁড় করাতে পারিনি। বরং শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়ন থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়ন সময়ের ন্যায্য দাবি।
.
লেখক-
অধ্যক্ষ, তাহের-মনজুর কলেজ, সীতাকুণ্ড, চট্টগ্রাম।