রতন কান্তি দাশ, সাতকানিয়াঃ
চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় সমাজের সর্দারকে না জানিয়ে বিয়ে করায় মো. ওয়াহিদুল ইসলাম আলমগীর নামে অসহায় এক যুবককে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
উপজেলার চুনতি ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের হাটখোলা মুড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী যুবক ওই এলাকার জুনু মিয়ার ছেলে।
গেলো ৭মার্চ, সোমবার সকালে সরেজমিন জানা গেছে, ছোটবেলায় আলমগীরের মা মারা যায়। ৫ ভাইয়ের মধ্যে বড় ভাই বিয়ে করে আলাদা থাকে। বাড়িতে ভাত রান্না করার মতোও কেউ না থাকায় গত বছরের মার্চে তাড়াহুড়ো করে তাকে বিয়ে করতে হয়। বর্তমানে তিনি চট্টগ্রাম নগরীতে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তার বিয়েতে কোনো বরযাত্রী (বৈরাত) ছিল না। ওয়ালিমা খাওয়ানোর মতো সামর্থ্যও তার নেই।
সমাজের সর্দার শামসুদ্দিনকে বিয়ের কথা বলা হলেও পূর্বশত্রুতার জেরে স্থানীয় কতিপয় কুচক্রী মহলের প্ররোচনায় সমাজের সর্দার তাকে অমানবিকভাবে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। সমাজের লোকজনকে একবেলা ভাত (বৈরাত) খাওয়াতে না পারায় তার বাবাকেও পথেঘাটে নানা কথা শুনতে হয়।
এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে আক্ষেপ করে মো. ওয়াহিদুল ইসলাম আলমগীর লিখেছেন- ‘বিয়ে করা কি পাপ? মা মারা যাওয়ার পরে একবেলা খেয়েছি, দুই বেলা খেতে পারি নাই। তখন তো সমাজ দেখে নাই। সময়মতো দুই বেলা ভাত খাওয়ার আশায় যখন বিয়ে করলাম, তখন বিয়ে করে সমাজের লোকজনকে একবেলা ভাত খাওয়াতে পারিনি বলে তখন নিকৃষ্ট সমাজ আমাকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করে। আল্লাহর কাছে বিচার চাই। এই জালিম সমাজ ধ্বংস হোক। হয়তো সুযোগ এবং সামর্থ্য ছিল না। না হয় কেউ কারো কাছে মাথা নত করে না।’
ভুক্তভোগী মো. ওয়াহিদুল ইসলাম আলমগীর যুগান্তরকে জানান, সমাজে তো অনেকেই আমার মতো বিয়ে করেছেন। তাদের তো কাউকেই জরিমানা করা হয়নি। কিছুদিন পূর্বে স্থানীয় একটি চক্র আউলিয়া মসজিদের টাকা আত্মসাৎ করে। আমি তার প্রতিবাদ করায় আমাকে বিয়ের অজুহাতে ১০ হাজার জরিমানা করা হয়েছে। আমার কাছে টাকা না থাকায় আমার বাবা ঋণ করে জরিমানার টাকা শোধ করেছেন।
স্থানীয় সমাজের সর্দার শামসুউদ্দিন সওদাগর যুগান্তরকে জরিমানার কথা স্বীকার করে জানান, সমাজকে না জানিয়ে বিয়ে করায় তাকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এটি গত ১০ বছর ধরে তাদের সামাজিক নিয়ম বলে তিনি জানান।
লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার আহসান হাবিব জিতু যুগান্তরকে জানান, এভাবে সমাজের সর্দারদের জরিমানা করার কোনো এখতিয়ার নেই। এটা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং আইনগত কোনো ভিত্তি নেই। ভুক্তভোগীকে তিনি স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদে লিখিত অভিযোগ দায়ের করার পরামর্শ দেন। তারপরও যদি ভুক্তভোগী কোনো প্রতিকার না পান তবে তিনি আইনগত ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান।
————-