ইসমাইল হোসেন চৌধুরী
বিগত দু’দিনের টানা বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম নগড় জুড়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। ডুবে গেছে নগরের সব নিচু এলাকা। জলাবদ্ধতার হাত থেকে রেহাই পায়নি স্বয়ং নগড় পিতার বাসভবনও। এতে তীব্র ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন নগরবাসীরা।
গতকাল শনিবার (১৮ জুন) নগরের বিভিন্ন এলাকা সরেজমিন পরিদর্শনে এমনটিই দেখা গেছে।
পরিদর্শনে দেখা যায়, নগরের মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, বাড়ইপাড়া, চাঁদগাঁও আবাসিক, পুরাতন চাঁদগাঁও থানা এলাকা, মোহরা, কাতালগঞ্জ, পাঁচলাইশ, বাকলিয়া পুলিশ বিট, রাসুলবাগ আবাসিক, ডিসি রোড এলাকা, চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ, ষোলশহর, ২ নম্বর গেইট, আগ্রাবাদ, হালিশহরসহ সব নিচু এলাকা পানিতে তৈ তৈ করছে। এসব এলাকার সর্বস্তরের জনসাধারণের দুর্ভোগের শেষ নেই। স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীদের স্কুল-কলেজে যাওয়ার সময় পড়তে হচ্ছে বিপাকে। অফিসগামী যাত্রীদেরও দুর্ভোগের শেষ নেই। কেউ রিক্সা, আবার কেউ হাঁটু কিংবা কোমর পানিতে যাত্রা শুরু করেছেন। রাস্তায় রিক্সা ছাড়া অন্য কোনো গাড়ি নেই। কেবল নগরের প্রধান সড়কটিকে চলছে বাস। এসময় যাত্রীরা তাঁদের দুর্ভোগের কথা জানিয়েছেন।
তাঁরা জানান, জলাবদ্ধতা সমস্যা নতুন নয়। প্রতি বর্ষায় নগরবাসীকে এ সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। মেয়র আসে, মেয়র যায়। সবাই প্রতিশ্রুতি দেয়। নির্বাচনের পরে সুর পাল্টায়। এ সমস্যার কোনো কূল-কিনারা হয়না।
এসময় তাঁদের অনেকে জানান, তাঁদের ভবনের নিচতলা ডুবে গেছে। তাঁরা বাসা থেকে বের হতে পারছেন না। বাসার সামনেই কোমড় পানি। আশেপাশের সড়কগুলোও পানিতে ডুবে আছে। একধরণের বন্দিদশায় আছেন। এ দশা থেকে মুক্তি চান তাঁরা।
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা জানান, তাঁদের দোকানপাট পানিতে ডুবে গেছে। লক্ষ লক্ষ টাকার মালামাল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ ক্ষতি পুষিয়ে নিতে তাদের যথেষ্ট বেগ পেতে হবে।
বহদ্দারহাট এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, নগর পিতা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিমের বাসভবনেরও বেহাল দশা। ডুবে আছে হাঁটু পানিতে।
এসব দেখে মোজাফফর নামে বহদ্দারহাট এলাকার একজন স্থানীয় বাসিন্দা রসিকতা করে বলেন, ‘যিনি আমাদের পানি থেকে রক্ষা করবেন, তাঁর ঘরও ডুবে গেছে। তিনি আগে নিজের ঘরটা রক্ষা করুক; তারপর আমাদের।’
এদিকে, বৃষ্টি আরো ১-২ দিন স্থায়ী হবে বলে জানিয়েছে পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস। সহকারী আবহাওয়াবিদ শেখ হারুনুর রশীদ দৈনিক দেশ বার্তা’কে জানান, ‘মৌসুমি বায়ুর সক্রিয় প্রভাবের কারণে চট্টগ্রামের কোথাও কোথাও বজ্রপাতসহ ভারি থেকে অতিভারি বর্ষণের আশঙ্কা রয়েছে। ২০ জুন পর্যন্ত চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় মাঝারী থেকে ভারি বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে। নদীবন্দরগুলোর জন্য ২ নম্বর সতর্ক সংকেত জারি করা হয়েছে।’
জলাবদ্ধতা ও জন দুর্ভোগের বিষয়ে কথা বলার জন্য মুঠোফোনে দফায় দফায় যোগাযোগের চেষ্টা করা হয় চসিক মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিম ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম দোভাষের সাথে। কিন্তু তাঁদের কেউ ফোন ধরেননি।
তবে, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে জনসংযোগ কর্মকর্তা আবুল কালাম চৌধুরী জানিয়েছেন, ‘জলাবদ্ধতা নিরসনে সিটি কর্পোরেশন প্রতিনিয়তই তাদের রুটিন কাজ করে যাচ্ছে। শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনের মেঘা প্রকল্পগুলোর কাজ শেষের দিকে। এসব কাজ শেষ হলে নগরের জলাবদ্ধতা সমস্যা আর থাকবেনা।’