জেপুলিয়ান দত্ত জেপু,চকরিয়াঃ
একাটানা বর্ষণে কক্সবাজার জেলার চকরিয়ায় খাদ্য শস্যের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এতে চাষীদের গুণতে হচ্ছে ঋণের টাকা। দীর্ঘ সপ্তাহজুড়ে বৃষ্টির ফলে নিম্নাঞ্চল পানিতে ডুবে থাকার ফলে এ ক্ষতি হয়েছে বলে কৃষকরা জানালেন।
জানা যায়,এ বর্ষামৌসুমে বিভিন্ন ধরণের সবজি ও পান চাষের ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল সাধারণ কৃষকরা। বিভিন্ন এনজিও ও সমবায় সমিতি থেকে মোটা অংকের ঋণ গ্রহণ করে কৃষকরা লাভের আশায় বর্ষার এ মৌসুমে সবজি ও পান চাষের উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল কিন্তু ভাগ্যের নির্মমতায় এবার বর্ষার শুরুতেই একটানা বৃষ্টিপাতের ফলে জেলার এ অঞ্চলের কৃষকরা লাভের আশা থেকে বঞ্চিত।
এদিকে চকরিয়ার পূর্বে পার্বত্য লামা- আলীকদমে ভারী বর্ষণে চকরিয়া উপজেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত মাতামুহুরী নদীর দু’কূল জুড়ে পানি প্রবাহের ফলে গ্রামীণ জনপদের পানি আটকে গিয়ে ফসলের এ ক্ষতি হয়েছে বলে চকরিয়া উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়।
চকরিয়া উপজেলার পূর্বে পার্বত্য বান্দরবান জেলার লামা- আলীকদম উপজেলার বিশাল বনভূমি বিগত কয়েক বছর ধরে বিলিন হওয়ায় বনশূন্য পাহাড় সমতলে বিলিন হওয়ার অপেক্ষা পালা শেষ হতে যাচ্ছে। এর একমাত্র দায়ভার ইটভাটার মালিক ও ফার্ণিচার মালিকদের উপর।
ওই পার্বত্য অঞ্চলে প্রায় ৩০ টি ইট ভাটায় বনের কাঠ জালানোর ফলে পরিবেশেষর ভারসম্য নষ্ট হচ্ছে বলে পরিবেশবাদীদের ধারণা। এ বনবৃক্ষ উজাড় হওয়ার ফলে বর্ষামৌসুমে ভারি বা মাঝারি বৃষ্টিপাত হলে পাহাড়ের উপরিতলের মাটি পানির সাথে মিশে গিয়ে পানির ঢল খাল ও নদীতে নেমে আসে।ফলে পানির স্রোতে প্রতিবন্ধকতায় আবাদী জমিতে পানি জমে থাকে। এতে ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় বলে ভুক্তভোগী কৃষকরা এ প্রতিনিধিকে জানালেন।
চকরিয়ার বরইতলী ইউনিয়নের একতা বাজার ও ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ভেন্ডি বাজার নামক বাজারে সবজির পাইকারি বিক্রয় করে স্থানীয় কৃষকরা। এ দুটি বাজারে চকরিয়ার উৎপাদি ফসল চট্রগ্রাম- কক্সবাজার জেলা শহরেও পৌঁছে। যা সবজির চাহিদার ব্যাপক যোগান দেয় চকরিয়ার চাষীদের উৎপাদিত সবজি।
কক্সবাজার জেলার মহেশখালীর মিষ্টি পানের খ্যাতি থাকলেও চকরিয়া উপজেলার বরইতলী ইউনিয়নের স্থানীয় চাষীরা চকরিয়া উপজেলার পার্শ্ববর্তী পার্বত্য জেলা বান্দরবানের লামা উপজেলার ফাইতং ইউনিয়নে ব্যাপক ভাবে মিষ্টি পানের চাষ করে থাকে। এ সব পান বরইতলী ইউনিয়নের টাইমবাজার নামক বাজারে চাষীরা বিক্রয় করে চট্রগ্রাম- কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন খুচরা বিক্রেতার কাছে।
এ ব্যাপারে স্থানীয় পান চাষীরা জানান, পান চাষে প্রচুর পুঁজি বিনিয়োগ করতে হয়,সেই অনুযায়ী আমরা ন্যায্যমূল্য পাই না।
বাজার ঘুরে চাষীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, পানচাষীরা পান চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে। তারা বললেন,সার,বিষ,বনজ বাঁশ,খড়,জমির খাজানা ও শ্রমিকের মূল্য বেশি হওয়ায় পান চাষ করে ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হওয়ায় তারা পান চাষে আগ্রহ হারেচ্ছে।
এ ব্যাপারে সরকার পান চাষীদের সুযোগ সুবিধা যোগান দিলে এ এলাকায় একদিকে যেমন পান চাষের মাধ্যমে দরিদ্র পরিবারে অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা বৃদ্ধি করা যাবে; তেমনি অন্যদিকে, দেশে পানের চাহিদা যোগান দেওয়া সক্ষম হবে।
চকরিয়ায় জলাবদ্ধতা ও অপরিকল্পিত নগরায়ন রোধ করতে পারলে সবজি চাষে ব্যাঘাত হবে না বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞ মহল। এ ছাড়াও মাতামুহুরী নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে পারলে জলাবদ্ধতা কাটিয়ে সব মৌসুমে সবজির সর্বোচ্চ ফলন হবে বলে চকরিয়া উপজেলার উন্নয়ন শাখার উপ সহকারী কৃষি অফিসার রাজীব দে জানালেন।
এদিকে, চকরিয়া উপজেলা সদরের কাঁচা বাজারসহ ইউনিয়ন ভিত্তিক বিভিন্ন সবজির বাজারে ইতিমধ্যে সবজির দাম আগের তুলনায় বেড়ে গেছে দ্বিগুণ।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সবজি তিত করলা,জিঙে,দেশি আলু,পটল,বরবটি,করলা,বেগুন, মিষ্টি কুমড়া,লাউ, কাঁচা মরিচের যোগান অনেকটাই কম।