আবু নাঈম, বোয়ালখালী:
চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার আমুচিয়া ইউনিয়নের প্রান্তিক কৃষক এস এম বাবর এবার ভুট্টা চাষে সাফল্যের স্বপ্ন দেখছেন। তিনি তাঁর নিজস্ব ২ একর জমিতে “মেজর হাইব্রিড ” জাতের ভুট্টা চাষ করেছেন।
বাবর বলেন, “অন্যান্য ফসলের তুলনায় ভুট্টা চাষে সার-কীটনাশক কম লাগে। বৃষ্টি হলে সেচের তেমন প্রয়োজন হয় না।” তিনি আরও জানান, গত ডিসেম্বরের শুরুতে বীজ বপনের পর জমি প্রস্তুত, আগাছা পরিষ্কার, সার ও কীটনাশক প্রয়োগ, ফসল কর্তন ও ঘরে তোলা পর্যন্ত সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে প্রায় ৭৫ হাজার টাকা।
বাজারে ভালো দাম থাকলে খরচ বাদে প্রায় দেড় লক্ষ টাকা লাভের আশা করছেন তিনি। বাবর বলেন, “আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার ফলন ভালো হয়েছে। ফসল ঘরে তুলে রোদে শুকিয়ে মাড়াইয়ের কাজ চলছে।”
খেতে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি গাছে ৪-৫টি মোছা রয়েছে, যেগুলোর ওজন ১ থেকে ১.২ কেজি পর্যন্ত। তিনি আশা করছেন, ২০০-২৫০ মণ ভুট্টা উৎপাদন হবে।
প্রতি ৪০ শতকে সার, বীজ ও শ্রমিক মিলে খরচ হয়েছে ১৫ থেকে ১৮ হাজার টাকা। গড়ে প্রতিদিন ৪-৫ জন শ্রমিক কাজ করেছেন, যাদের পারিশ্রমিক দেওয়া হয়েছে প্রতিজন ৭০০ টাকা করে।
তিনি আরও বলেন, “বীজ, সার, তেল ও কীটনাশকের দাম বেড়ে যাওয়ায় কিছুটা খরচ বাড়লেও অন্য ফসলের তুলনায় এখনও ভুট্টা চাষ লাভজনক। যদি বাজারজাত ও মাড়াই যন্ত্রের সহজলভ্যতা থাকে, তাহলে ভুট্টা আবাদ আরও বাড়ানো সম্ভব।”
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রসঙ্গে বাবর বলেন, “সরকার যদি আর্থিক সহায়তা দেয়, তাহলে আগামী বছর আরও বেশি জমিতে ভুট্টা চাষ করব।” তিনি আরও জানান, “ধানসহ অন্যান্য ফসলের তুলনায় ভুট্টা চাষ সহজ এবং লাভজনক। মাত্র ১২০-১৩০ দিনের মধ্যেই ফসল ঘরে তোলা যায়। কালবৈশাখী ঝড়ে ধানের যেমন ক্ষতি হয়, ভুট্টায় তেমন ঝুঁকি নেই।”
তিনি বলেন, “ভুট্টা শুকিয়ে মেশিনে প্রক্রিয়াজাত করে তা চট্টগ্রাম শহরের বাজারে বিক্রি করব। ভুট্টা চাষে কৃষকদের আগ্রহ ইতিবাচক। এটি সরকারের কৃষি খাতে একটি বড় সাফল্য। বাজারে ভুট্টার চাহিদা থাকায় দামও ভালো পাচ্ছি।”
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আতিক উল্লাহ জানান, চলতি মৌসুমে বোয়ালখালী উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ৫ হেক্টর জমিতে ভুট্টা আবাদ হয়েছে। তিনি বলেন, “ভুট্টা একটি সেচ ও সার সাশ্রয়ী ফসল। কৃষকরা সাধারণত হাইব্রিড জাতের ভুট্টা চাষে আগ্রহী। এর মধ্যে ‘এনএ-৭৭’ জাতটি মাঠপর্যায়ে ভালো ফলন দিচ্ছে। এই জাতের গাছ মজবুত হওয়ায় সহজে ভেঙে পড়ে না এবং উৎপাদনও ভালো হয়।”
তিনি আরও বলেন, “এছাড়াও এনকে পট্টি ও বিএডিসি সরবরাহকৃত ভুট্টার জাতগুলোও চাষ হচ্ছে। তবে ‘এনএ-৭৭’ জাতটি অধিক ফলনশীল হওয়ায় এটি বেশি জনপ্রিয়। বিশেষ করে যেসব এলাকায় সেচের পানির সংকট রয়েছে, সেখানে এ জাতটি অত্যন্ত উপযোগী।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন, “ভুট্টা একটি লাভজনক ফসল। অল্প সময়ে কৃষকরা এর থেকে লাভবান হতে পারেন। ভুট্টা চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়াতে সরকার প্রণোদনার পাশাপাশি প্রশিক্ষণ ও কারিগরি সহায়তা প্রদান করছে।”